বাঙালির জীবন জুড়ে থাকা এক সরল সঙ্গী - উপকারী না অপকারী?
এই মুড়ি আমাদের ব্যাস্ততম জীবন চক্রে আমাদের ছায়া সঙ্গী হয়ে নিত্যদিনের সাথী হয়ে থাকে, সকালবেলা যখন ঘুম থেকে উঠে বাচ্চা থেকে বুড়ো তাড়াহুড়োয় এক কাপ গরম চায়ের সাথে এই মুড়িই তো আমাদের ভরসা দেয়, তাই না? আবার তাড়াহুড়োর সময়ে চা মুড়ি যেন এক পরম বন্ধু। অল্প সময়ে পেটও ভরে, আর মনটাও খুশি হয়ে যায়।
আবার বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পরে, বাচ্চারা খেলে বাড়িতে ফিরে, চাষিরা মাঠ থেকে ফিরে, এক কথায় বিকেলে খিদে পায় তখন , তখন চপ মুড়ি। পেঁয়াজ, লঙ্কা,শসা, ধনেপাতা দিয়ে মাখা মুড়ির সাথে গরম গরম আলুর চপ! উফফ, ভাবলেই জিভে জল আসে।
বৃষ্টির দিনে বা ঠান্ডার সন্ধ্যায় গরম চপের সাথে মুড়ি যেন অমৃত। কত জনের কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই মুড়ির সাথে। ,
এছাড়াও ছোলা মুড়ি, ডাল মুড়ি, তরকারী মুড়ি,বাসিভাত মুড়ি, বুঁদে মুড়ি, যার যা, রুচি সে সেভাবেই মুড়ি খায়, মুড়ি আমাদের তৃপ্তি দেয়।
এই মুড়ি শুধু একটা খাবার নয়। এটা আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি। যেমন সহজে পাওয়া যায়, তেমনই সহজে মিশে যায় সবকিছুর সাথে। চায়ের সাথে যেমন হালকা, চপের সাথে তেমনই মুখরোচক, আর তরকারীর সাথে তেমনই তৃপ্তিদায়ক।
মুড়ি আবার সব সময় সব জায়গায় খাওয়াও চলে জেমন সকালে মুড়ি, দুপুরে মুড়ি,বিকালে, মুড়ি,রাত্রে মুড়ি, সবার মধ্যেই কম বেশি করে এই মুচমুচে খাবার খাওয়ার প্রবনতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
মুখের রুচি ফেরাতে অনেক সময় ডাক্তার বাবুরা আদা বা পুদিনা পাতা দিয়ে মুড়ি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকতে শোনা যায়।
যেকোন সময় যেকোন পরিস্থিতিতে মুড়ি খাওয়া সম্ভব বসে খাওয়া, দাড়িয়ে খাওয়া শুয়ে-বসে, হেঁটে চলে অফিসে,পার্কে , মাঠে , ট্রেনে, বাসে মুড়ি কীসের এত জনপ্রিয় এই মুচমুচে মুড়ি।
আসুন দেখি মুড়ির মধ্যে কী আছে
মুড়ি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য সাধারণত উপকারী। তবে অতিরিক্ত মুড়ি খাওয়া বা কিছু স্বাস্থ্যগত অবস্থা থাকলে মুড়ি খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। নিচে মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতাগুলো আলোচনা করা হলো:
মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা:
* হজমে সাহায্য করে: মুড়িতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
* অ্যাসিডিটি কমায়: মুড়ি খেলে পেটে অ্যাসিডের ক্ষরণে ভারসাম্য আসে, ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা কমে।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: মুড়িতে ভিটামিন বি ও প্রচুর পরিমাণে মিনারেল থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
* হাড় শক্ত করে: মুড়িতে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফাইবার থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
* শক্তি জোগায়: মুড়িতে শর্করা থাকে, যা শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
* ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে: কম ক্যালোরির খাবার হিসেবে মুড়ি খাওয়া যেতে পারে।
মুড়ি খাওয়ার অপকারিতা:
* ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়: মুড়িতে উচ্চ পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
* কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে: অতিরিক্ত মুড়ি খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
* অতিরিক্ত সোডিয়াম: অনেক মুড়িতে অতিরিক্ত সোডিয়াম থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে।
কাদের মুড়ি খাওয়া উচিত নয়:
* যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের মুড়ি খাওয়া উচিত নয়।
* যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তাদের মুড়ি খাওয়া উচিত নয়।
* যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাদের মুড়ি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত।
তাই মুড়ি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকলে মুড়ি খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
সাধারণ জিনিসও কত অসাধারণ হতে পারে, যদি তার সাথে ভালোবাসা আর স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। আর মুড়ি তো শুধু মুড়ি নয়, ওটা যেন এক টুকরো জীবন, যা বিভিন্ন স্বাদে আমাদের মুখে লেগে থাকে।
#healthyfoodideas,#Muri,#murighonto,#puffrice,#bengalifood,#snacks,#breakfastideas,#railfood,#TiffinTime
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন