সবুজ দ্বীপের সবুজ স্বপ্ন
সবুজ দ্বীপের স্বপ্ন
ছোট্ট দ্বীপ ‘সবুজ দ্বীপ’ তার নামটির মতোই ছিল মনোরম। ঘন সবুজ বনানী, স্বচ্ছ নীল জল আর পাখির কলকাকলিতে মুখরিত এক শান্তিময় জগৎ। দ্বীপের মানুষের জীবন ছিল প্রকৃতির সাথে বাঁধা। তারা মাছ ধরত, ফলমূল সংগ্রহ করত আর সহজ সরল জীবন যাপন করত।
একদিন, দ্বীপের তীরে এসে ভিড়ল এক বিশাল দৈত্যাকার জাহাজ। জাহাজে করে এল কিছু অচেনা মানুষ, যাদের হাতে ছিল অদ্ভুত সব যন্ত্রপাতি। তারা দ্বীপের একপাশে কারখানা তৈরি করতে শুরু করল। দ্বীপের মানুষ প্রথমে অবাক হলেও, ধীরে ধীরে কারখানার কাজ বাড়তে লাগল।
কারখানার চিমনি থেকে বের হতে শুরু করল কালো ধোঁয়া, যা ধীরে ধীরে দ্বীপের আকাশকে বিষিয়ে তুলল। স্বচ্ছ জল ঘোলাটে হল, আর তাতে মেশা রাসায়নিক বর্জ্য মাছদের মেরে ফেলতে শুরু করল। বনের গাছপালা মরতে শুরু করল, পাখির কলরব কমে গেল। সবুজ দ্বীপ ধীরে ধীরে তার সৌন্দর্য হারাতে বসল।
দ্বীপের এক ছোট্ট ছেলে, অয়ন , প্রকৃতির এই পরিবর্তন দেখে খুব কষ্ট পেল। সে রোজ দেখত আকাশ কালো হচ্ছে, নদী দূষিত হচ্ছে আর তার প্রিয় গাছপালাগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। অয়নের মনে প্রশ্ন জাগল – কেন এমন হচ্ছে? কারা এর জন্য দায়ী?
একদিন, অয়ন তার দাদু, যিনি ছিলেন একজন জ্ঞানী মানুষ, তার কাছে গেল। দাদু সব শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তিনি বললেন, “বাবা, এরা নিজেদের লাভের জন্য আমাদের প্রকৃতির ক্ষতি করছে। এদের লোভের কাছে আমাদের সবুজ দ্বীপ আজ বিষন্ন, বিপন্ন।”
অয়নের ছোট্ট মনে জেদ চেপে বসল। সে একা হলেও এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। প্রথমে সে তার বন্ধুদের সাথে কথা বলল। প্রথমে তারা ভয় পেলেও, অয়নের চোখে প্রকৃতির জন্য ভালোবাসা দেখে তারাও এগিয়ে এল।
তারা সবাই মিলে কারখানার আশেপাশে গিয়ে দাঁড়াল। তাদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড – “আমাদের সবুজ দ্বীপকে বাঁচান”, “দূষণ বন্ধ করুন”। কারখানার লোকেরা প্রথমে তাদের পাত্তা দিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে দ্বীপের আরও মানুষ তাদের সাথে যোগ দিতে শুরু করল।
তাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চলতে থাকল দিনের পর দিন। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা গান গাইত, বয়স্করা তাদের অভিজ্ঞতা বলতেন। তাদের সম্মিলিত কণ্ঠ এক শক্তিশালী আওয়াজে পরিণত হল।
অবশেষে, দ্বীপের মানুষের এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ কারখানা কর্তৃপক্ষের কানে পৌঁছাল। বাইরের শহর থেকেও পরিবেশবাদীরা এসে তাদের সমর্থন জানালো। ধীরে ধীরে বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে ছড়িয়ে পড়ল।
সরকার বাধ্য হল হস্তক্ষেপ করতে। কারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কঠোর নিয়ম জারি করা হল। যারা নিয়ম ভাঙছিল, তাদের জরিমানা করা হল। দ্বীপের মানুষ নিজেরাই হাতে হাতে পুরনো দিনের সবুজ ফিরিয়ে আনার কাজে লেগে পড়ল।
বহু বছর পর, সবুজ দ্বীপ আবার তার পুরনো রূপে ফিরে এল। আকাশ আবার নীল হল, জল আবার স্বচ্ছ হল, বনে আবার পাখির কলরব শোনা গেল। অয়ন, যে ছোট্ট ছেলেটি একা প্রতিবাদ শুরু করেছিল, আজ একজন তরুণ এবং দ্বীপের পরিবেশ রক্ষার প্রধান।
এই গল্প আমাদের শেখায় যে একা মনে হলেও, প্রকৃতির জন্য ভালোবাসা আর সম্মিলিত প্রচেষ্টা যেকোনো বিপদকে জয় করতে পারে। আমাদের চারপাশের পরিবেশকে রক্ষা করা শুধু সরকারের বা কোনো সংস্থার দায়িত্ব নয়, আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। ছোট্ট একটি পদক্ষেপও অনেক বড় পরিবর্তন আনতে পারে, যদি আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি। সবুজ দ্বীপের স্বপ্ন আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে – একটি সুস্থ ও সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন।
#পরিবেশ সচেতনতা, #পরিবেশ দূষণ,#সবুজ দ্বীপ,#প্রকৃতি রক্ষা,#দূষণ মুক্তি,#জনসচেতনতা,#প্রতিবাদ,#ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা,#টেকসই জীবন,#পরিবেশের যত্ন,#শিক্ষামূলক গল্প,#ব্লগ গল্প,ছোটদের গল্প,#বাংলা গল্প,
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন